মো. কাওছার আহম্মেদ, রাঙ্গাবালী, পটুয়াখালী
তরমুজের নগরী বিছিন্ন দ্বীপ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা। তরমুজ একটি সুস্বাদু ফল, গরম যত বেশি তরমুজের চাহিদাও তত বেশি। এই রাঙ্গাবালীর আগাম তরমুজের সুনাম রয়েছে সারা দেশে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও আগাম তরমুজ চাষ করেছেন এই উপজেলার কৃষকরা। ফলনও ভালো হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলে তরমুজ উৎপাদনে অন্যতম এলাকা হিসেবে পরিচিত রাঙ্গাবালী। এখানকার তরমুজের গুণগতমান ভালো হওয়ায় দেশজুড়ে সুনাম কুড়িয়েছে। চাহিদার পাশাপাশি লাভজনক ফল হওয়ায় নতুন নতুন চাষিও বাড়ছে এখানে। সাধারণত ডিসেম্বরে আমন ধান তোলার পর জানুয়ারি থেকে তরমুজের আবাদ শুরু হয়। ফলন আসে এপ্রিলে। তবে রাঙ্গাবালী উপজেলায় ডিসেম্বরেই আগাম তরমুজের আবাদ শুরু হয়। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় তরমুজ বিক্রি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা ট্রাকে করে তরমুজ নিয়ে যাচ্ছেন দেশজুড়ে। তবে গত বছরের চেয়ে তরমুজের ফলন ভালো হওয়ায়। এবারে ভালো দাম পাওয়ার আশা কৃষকের।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে রাঙ্গাবালীতে ৮ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। গত বছর এ উপজেলায় তরমুজ আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৩৫০ হেক্টর। গত বছরের চেয়ে এ বছর তরমুজ আবাদ হয়েছে বেশি।
উপজেলার কাউখালী চর, পাঙ্গাশিয়ার চর, চর ইমারশনসহ বিভিন্ন চর ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ ক্ষেতজুড়ে তরমুজের সমারোহ। লতায় মোড়ানো সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে তরমুজ। এই তরমুজ নিয়েই এখন চাষিদের স্বপ্ন আর ব্যস্ততা।
উপজেলার ছোটবাইশদিয়া কাউখালীর চরের তরমুজ চাষী মো. বেল্লাল বলেন, এ বছর ৬ হেক্টরে তরমুজ চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে ভালো। তার এ বছর তরমুজ চাষে খরচ হয়েছে ১৮ লাখ টাকা। যদি আবহাওয়া ঠিক থাকে তাহলে ৫০-৫৫ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে জানান এই কৃষক।
তরমুজ চাষী খোকন, বশির, মুকুল জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর তরমুজের ফলন ভালো। প্রতি বছর রোগ-বালাই থাকলেও এ বছর অনেকটাই কম। তাই তরমুজ চাষীরা গত বছরের চেয়ে লাভবান হবে বলে মনে করেন তারা। এ বছর দামও ভালো। আবার সামনে রমজান। আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো লাভবান হবেন চাষীরা।
তিনি আরও বলেন, গত বছর বিভিন্ন রোগ-বালাই থাকার কারণে ভালো লাভবান হতে পারে নাই। এ বছর প্রজেক্ট ভালো হওয়ায়, আগামী বছর প্রজেক্ট বাড়ানোর কথা জানান তিনি।
উপজেলার কোড়ালিয়ার বাসিন্দা রনি মৃধা জানান, এ বছর তিনি ৩ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন তার খরচ গেছে ১০ লাখ টাকা।
তিনি আরও বলেন, এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। আবহাওয়া যদি ভালো থাকে তাহলে তার বিক্রি হবে ২০ লাখ টাকা।
রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদ্দুজ্জামান বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে রাঙ্গাবালীতে প্রায় ৮ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। গত বছর তরমুজ আবাদ হয়েছিল ৬ হাজার ৩৫০ হেক্টর। গত বছরের চেয়ে এ বছর তরমুজ অবাদ বেশি হয়েছে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষতির শঙ্কা মাঠে দেখা যায় নি। কোনো প্রতিকূলতা না থাকলে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির আশা করছেন এই কর্মকর্তা।